নিচে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি লেখা দেওয়া হলো। এটি গোলাম মুরশিদের লেখা। গোলাম মুরশিদ ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা ভাষার একজন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে ‘আশার ছলনে ভুলি’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গোলাম মুরশিদ
নানা দেশে পৌঁছে গেছে বাঙালিরা। এমনকি, পৌঁছে গেছে চাঁদেও! নভোযানে করে যায়নি। তবে বাংলার নামটা চাঁদে পৌঁছে গেছে। চাঁদের গায়ে কালো কালো অনেক দাগ দেখা যায়। এগুলি আসলে বড়ো বড়ো গর্ত। এর মধ্যে একটা গর্তের নাম দেওয়া হয়েছে একজন বাঙালির নাম অনুসারে। তিনি একজন বিজ্ঞানী। এই বিজ্ঞানীর নাম জগদীশচন্দ্র বসু।
১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর তিনি জন্মেছিলেন মুন্সিগঞ্জ জেলার রাঢ়িখাল গ্রামে। অঞ্চলটি তখন বিক্রমপুর নামে পরিচিত ছিল। এই বিজ্ঞানীর বাবা ভগবানচন্দ্র বসু তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের হেডমাস্টার হিসেবে। কয়েক বছর পর তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। তিনি মনে করতেন, লেখাপড়া শুরু করা উচিত মাতৃভাষা বাংলা দিয়ে। তারপরে ইংরেজি পড়া।
জগদীশ বাংলা ভাষায় তাঁর লেখাপড়া আরম্ভ করেছিলেন। একটু বড়ো হয়ে তিনি কলকাতায় হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। তারপর ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে তিনি ১৮৭৯ সালে বিএ পাশ করেন। এই কলেজে থাকাকালে তিনি ইউজিন লাফোঁ নামে একজন শিক্ষকের কাছাকাছি আসেন। এই শিক্ষক জগদীশের মনে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে আগ্রহ সৃষ্টি করেন। এই আগ্রহ পরবর্তী কালে তাঁকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে।
সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করার পর ১৮৮০ সালে ডাক্তারি পড়ার জন্য জগদীশ ইংল্যান্ডে যান। সেখানে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু লাশ-কাটা শিখতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন ইংল্যান্ডে ছিলেন আনন্দমোহন বসু। তিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি র্যাংলার। র্যাংলার হচ্ছে গণিতের সবচেয়ে উঁচু ডিগ্রি। তাঁর সাহায্যে জগদীশ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কাজ করেন লর্ড র্যালে এবং অন্য কয়েকজন নাম-করা শিক্ষকের অধীনে। র্যালে পরে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। জগদীশ সাধারণ ডিগ্রি না করে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপস ডিগ্রি করেন ১৮৮৪ সালে। ঐ একই বছর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রিও লাভ করেন। কয়েক বছর পর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রিও পান।
বিজ্ঞান কথাটার অর্থ আমরা জানি। যিনি বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, তিনি হলেন বিজ্ঞানী। যে ব্যক্তি বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি করেছেন, তাঁকেও তাই বিজ্ঞানী বলা যায়। কিন্তু সত্যিকার বিজ্ঞানী বলে তাঁকে, যিনি কোনো না কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কাজ করেছেন; যেমন টেলিফোন আবিষ্কার।
জগদীশ ছিলেন পদার্থ-বিজ্ঞানী। তিনি পদার্থ-বিজ্ঞানের অনেকগুলি জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন। মানুষ এসব জিনিসের কথা আগে জানত না। যেমন, বৈদ্যুতিক চুম্বক-তরঙ্গের কথা। এই তরঙ্গ এতটা লম্বা যে, তাকে কাজে লাগনো যায় না। জগদীশ খুব ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ-তরঙ্গ আবিষ্কার করেন। একে বলে মাইক্রোওয়েভ। তিনি মাত্র ৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন। এখন যে রেডিও-টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মাইক্রোওয়েভ কুকার ইত্যাদি দেখতে পাই, সেগুলো জগদীশ বসুর আবিষ্কারের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে।
১৮৯৪ সালে তিনি কলকাতার টাউন হলে তাঁর আবিষ্কারের কয়েকটা জিনিস প্রকাশ্যে দেখান। তিনি এক ঘরে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে বিনা তারে অন্য ঘরে রাখা বারুদে আগুন লাগিয়ে দেন। বিনা তারে অন্য একটা ঘরে বেল অর্থাৎ ঘণ্টা বাজান।
তাঁর গবেষণার আর-একটা ক্ষেত্র হলো গাছপালা, উদ্ভিদ। এরা কথা বলতে পারে না, এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায় যেতে পারে না। কিন্তু এদের প্রাণ আছে, মানুষ তা অনুমান করত। তবে এরা যে মানুষের কাজে সাড়া দেয়, তা জানত না। ধরা যাক, মানুষ একটা লতার একটুখানি কেটে দিলো। লতাটা অমনি প্রবলভাবে কেঁপে উঠল। কিন্তু এই কম্পন চোখে দেখা যায় না। সেটা মাপার জন্য জগদীশ একটা যন্ত্র তৈরি করেন। তার নাম ক্রেসকোগ্রাফ। আর একটা উদাহরণ দিই। জানালার কাছে একটা চারা গাছ লাগালে, গাছটা যেদিক দিয়ে আলো আসছে সেদিকে বেঁকে যাবে। জগদীশ এটাও পরীক্ষা করে দেখান।
এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন দেখা যায়। টেলিভিশনে কথা শোনা যায়, ছবিও দেখা যায়। রেডিওতে কেবল কথা শোনা যায়। রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশলটি জগদীশ আবিষ্কার করেন ১৮৯৬ সালে। কাছাকাছি সময়ে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী মার্কনি-ও একই কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন। তবে কথা-বলা রেডিও আবিষ্কার হতে আরও কয়েক বছর লেগেছিল।
অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় জগদীশচন্দ্র বসুকে সম্মানসূচক ডিএসসি উপাধি দেয়। তিনি এফআরএস উপাধি পান। ব্রিটিশ সরকার ৫০ পাউন্ডের নোটে তাঁর ছবি ছাপে।
অনুমান করা: আন্দাজ করা। | নভোযান: রকেট। |
ইন্টারনেট: তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের সংযোগ-ব্যবস্থা। | নোবেল পুরস্কার: বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে যে পুরস্কার দেওয়া হয় । |
এফআরএস: ফেলো অব দ্য রয়াল সোসাইটি; লন্ডনের বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান রয়াল সোসাইটি থেকে পাওয়া সম্মান। | পাউন্ড: যুক্তরাজ্যের মুদ্রা। |
ক্রেসকোগ্রাফ: উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র। | প্রকাশ্যে: সবার সামনে। |
ট্রাইপস ডিগ্রি: কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি। | প্রাকৃতিক বিজ্ঞান: উদ্ভিদ, প্রাণী, পদার্থ, পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সংক্রান্ত বিজ্ঞান। |
ডিএসসি: ডক্টর অব সায়েন্স; বিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি। | মাইক্রোওয়েভ কুকার: মাইক্রোওয়েভ বা ক্ষুদ্র তরঙ্গ ব্যবহার করে যে যন্ত্রে রান্না করা হয়। |
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট: জেলা প্রশাসনের অধীন কর্মকর্তা। | সাড়া: প্রতিক্রিয়া। |
ক. জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে এই লেখায় কী কী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে?………………………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
খ. এই লেখা থেকে সাল-ভিত্তিক তথ্যগুলো ছকের আকারে উপস্থাপন করো:
সাল | তথ্য |
---|---|
১৮৫৮ | জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম |
গ. এই ধরনের জীবন-তথ্যমূলক আর কী কী রচনা তুমি পড়েছ?…………………………………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ঘ. এই লেখা থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর কী কী আবিষ্কারের কথা জানতে পারলে?………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ঙ. বিবরণমূলক লেখার সাথে তথ্যমূলক লেখার মিল-অমিল খুঁজে বের করো।…………………………………………………………………………..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো ।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
---|---|
১
| |
২
|
তথ্য পরিবেশন করা যেসব লেখার মূল লক্ষ্য, সেগুলোকে তথ্যমূলক লেখা বলে। এ ধরনের লেখায় তথ্য পরিবেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। বইপত্র পড়ে, অনলাইনের মাধ্যমে কিংবা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য উপস্থাপনের সময়ে জানা তথ্যও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে মিলিয়ে নিতে হয়। তথ্যমূলক রচনাকে আকর্ষণীয় করার জন্য নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকার।
এ ধরনের লেখায় বিষয় অনুযায়ী একটি শিরোনাম থাকে। কোন তথ্যের পরে কোন তথ্য পরিবেশন করা হবে তার একটি ধারাবাহিকতা রাখতে হয়। সাধারণত একই ধরনের তথ্য এক জায়গায় রাখা হয়। তথ্যমূলক লেখার মধ্যে ছবি, ছক, সারণি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
কোনো ব্যক্তির জীবনী, স্কুল বা কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি, বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা-নির্ভর বিবরণ ইত্যাদি নিয়ে তথ্যমূলক রচনা তৈরি করা যায়। তথ্যমূলক লেখার মূল উদ্দেশ্য পাঠককে তথ্য জানানো। তাই এ ধরনের লেখায় ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ঠিক নয়। যেমন, তুমি হয়তো বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি তথ্যমূলক রচনা তৈরি করতে চাও। এক্ষেত্রে তোমার মোবাইল আছে কি নেই, মোবাইল ব্যবহার করতে ভালো না মন্দ লাগে, এ রকম কথা লেখার দরকার নেই। বরং বছর অনুযায়ী মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা, কোন ধরনের মোবাইল ব্যবহারকারী কত জন, এগুলো উল্লেখ করা জরুরি।
তোমরা দলে ভাগ হও। এরপর শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করো। এখানে কয়েকটি নমুনা-প্রশ্ন দেওয়া হলো:
১. স্কুলের আশেপাশে কী কী ফলের গাছ আছে? কোন গাছ কতটি করে আছে?
২. স্কুলের আশেপাশে কী কী ফুলের গাছ আছে? কখন কোন ধরনের ফুল ফোটে?
৩. তোমাদের এলাকায় কোন কোন পাখি বেশি দেখা যায়? কোন পাখির রং কেমন?
৪. তোমার এলাকায় কোন কোন পেশার মানুষ আছে? তারা কী ধরনের কাজ করেন?
৫. স্কুলের আশেপাশে কোন কোন ধরনের দোকান আছে? কোন দোকানে কী কী জিনিস পাওয়া যায়?
একেকটি দল একেকটি বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যেকে পৃথকভাবে একটি তথ্যমূলক রচনা লিখবে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
Read more